Whatsapp: 01567808596

  |  

Track Order

শয়তানের উপাসকদের গল্প
শয়তানের উপাসকদের গল্প

শয়তানের উপাসকদের গল্প

লেখকঃ কাজি ম্যাক

প্রকাশকঃ বইপিয়ন প্রকাশনী 

 

ইরাকের একটি রহস্যময় ধর্মীয় গোষ্ঠী ইয়াজিদি সম্প্রদায়। যাদের কে সারা বিশ্ব শয়তানের আনুষ্ঠানিক উপাসক হিসাবে জানে। যারা ইবলিশ শয়তান তথা মেলেক তাউসের আরাধনা করে থাকে। চলুন জেনে নেয়া যাক তারা মুসলিমদের সম্পর্কে কি ধারণা পোষন করে। এবং সেই সাথে অবলোকন করবেন কি অদ্ভুত তাদের নীতি।
(১২৮৯-১৮৭২)- খ্রিস্টাব্দের দিকে অটোমান প্রশাসন ইয়াজিদিদের বকেয়া কর এবং নিয়মিত করের পরিবর্তে সৈন্য হিসাবে কাজ করার আহবান জানান। এই প্রস্তাবের পরিবর্তে তারা তাদের নিয়মনীতি তুলে ধরে এই প্রস্তাবের প্রতি অস্বীকৃতি জানিয়ে একটি চিঠি পাঠায় অটোমেন প্রশাসনের কাছে। নিম্নে সেসব বিধিবিধান তুলে ধরা হলোঃ
১। ইয়াজিদি ধর্মমত অনুসারে, তাদের সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেক নারী এবং পুরুষকে বছরে তিনবার মেলেক তাউস কে দর্শন করতে হবে। প্রথম দর্শন সম্পাদন করতে হবে এপ্রিল মাসের শুরু থেকে শেষ অব্দি। দ্বিতীয় দর্শনের সময়সীমা সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে শেষ অব্দি। তৃতীয় দর্শনের সময় সীমা হচ্ছে নভেম্বর মাসের শুরু থেকে শেষ অব্দি। যদি কেউ এই কার্যসম্পাদন নাহ করে বা তার চিত্রে দর্শন নাহ করে। তবে তিনি কাফের হয়ে যাবেন।
২। আমাদের সম্প্রদায়ের কেউ যদি বছরে একবার আমাদের সর্বচ্চ নেতা শেখ আদি বিন মুসাফিরের মাজার জিয়ারত নাহ করে। তবে যে কাফের হয়ে যাবে। আর, এই তীর্থ যাত্রা অনুষ্ঠিত হয় সেপ্টেম্বর মাসের ১৫ তারিখ থেকে ২০ তারিখ অব্দি।
৩। আমাদের সম্প্রদায়ের প্রত্যেক সদস্যকে অবশ্যই প্রতিদিন সূর্যদয়ের স্তানটি দর্শন করতে হবে এবং সেখানে চুম্বন করতে হবে। যখন এই রশ্মি উপস্থিত হয় সেখানে কোনভাবেই ইহুদি, খ্রিস্টান, মুসলিম বা অন্যকোন সম্প্রদায়ভূক্ত লোকজন উপস্থিত থাকতে পারবে নাহ। আর, এই কাজ যদি কেউ নাহ করে তবে সে কাফের।
৪। আমাদের সম্প্রদায়ের প্রত্যেক সদস্যকে অবশ্যই তার ভাইয়ের হাতে চুম্বন করতে হবে। এরপর, চুম্বন করতে হবে পীর কে। কেউ যদি ইহা নাহ করে তবে সে কাফের।
৫। আমাদের ধর্ম অনুসারে, মুসলিমরা যেভাবে তাদের দিন শুরু করে শয়তানকে গাল-মন্দ করার মাধ্যমে। এবং তার কাছ থেকে নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখার জন্য ইশ্বরের কাছে দোয়া প্রার্থনা করে থাকে। আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে যদি কেউ এসব শুনতে পায়। তবে তার জন্য অবশ্যই তাকে হত্যা করা ফরজ। তাকে, হত্যা করার পর সে ব্যক্তির নিজেকেও কোরবানি করে দিতে হবে। এই কার্য তিনি সম্পাদন নাহ করলে তিনি কাফের।
৬। যখন আমাদের কোন সম্প্রদায় বিলুপ্তির দ্বার প্রান্তে থাকবে। তখন, আমাদের কাওয়ালদের সাথে এই দোয়া তিনবার পড়তে হবেঃ
"ওহ! আমাদের প্রভু মেলেক তাউস! আমরা আপনার দাস বলছি। আপনার দেখানো পথ কত উচ্চ।আপনি আমাদের সেই মেলেক যাকে আমরা পূজা করি। আপনার দেখানো পথেই আমাদের চলতে হবে। আমাদের জন্য কোন ভাবেই অন্য ধর্মের বা সম্প্রদায়ের দলভুক্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করার সুযোগ নেই। যদি কেঊ তোমাদের কাছে আসে এবং সে যদি ইসলাম, খ্রিস্টান, এবং ইহুদি ধর্মের বিধি বিধান বা কোন বাণী তোমাদেরকে শোনায়। তবে, তোমরা তার কথা বিশ্বাস করবে নাহ। কারণ, তিনি মেলেক তাউসের শত্রু। আর, কেউ যদি তাদের কথা মেনে নিয়ে তাদের মত গ্রহণ করে। তবে, তার মৃত্যু হবে কাফের হিসাবে।
৭। শেখ আদি-র সমাধির ধূলো আমাদের সম্প্রদায়ের সকলের কাছে থাকতে হবে। এবং প্রতিদিন সকালে শেখ আদি-র সম্মানার্থে এই ধূলো খেতে হবে। যদি কেউ এই কার্য সম্পাদন নাহ করে তবে সে কাফের।
৮। রোযার সময় আমাদের সম্প্রদায়ের কেউ যদি রোযা রাখতে চায়। তবে, তাকে অবশ্যই নিজের স্থানে থেকে রোযা রাখতে হবে৷ তবে, রোযা রাখার সময় তাকে প্রতিদিন সকালে তার পীরের কাছে গিয়ে রোজা রাখার অনুমতি নিতে হবে। অতঃপর, তা ভাঙার সময় অবশ্যই তার পীরের বাসায় তার সাথে পবিত্র মদ পানের মাধ্যমে তা ভাঙতে হবে। যদি কেউ কমপক্ষে তিন গ্লাস মদ পান না করে তবে তার রোজা গ্রহণযোগ্য হবে নাহ। তিনি কাফের হয়ে যাবেন।
৯। আমাদের সম্প্রদায়ের কেউ যদি অন্য যায়গায় চলে যায়। নিজের কমিউনিটি ছেড়ে। সেখানে যদি ঐ ব্যক্তি একবছর অবস্থান করে। এরপর যদি সে ফিরে আসে তবে তার বউ তারজন্য নিষিদ্ধ। তিনি আর তাকে গ্রহণ করতে পারবে নাহ এবং নতুন করে কাউকে প্রহণ করতে পারবে নাহ। যদি কেউ তাকে মেয়ে সম্পাদন করে। তবে ঐ ব্যক্তি কাফের হয়ে যাবে।
১০। যদি কেউ আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন জামা তৈরি করে। তবে তাকে তা পরিধান করার আগে অবশ্যই শেখ আদির মাজারের পবিত্র পানি দ্বারা ধৌত করে তা শুদ্ধ করতে হবে। যদি কেউ এই কার্য সম্পাদন নাহ করে। তবে, তিনি কাফের হয়ে যাবেন।
১১। আমাদের সম্প্রদায়ের জন্য হালকা কালো রং-র পোশাক পরা নিষিদ্ধ৷ আমরা মাথার চুল মুসলিম, ইহুদি কিংবা খ্রিস্টানদের মত সীথি করি নাহ বা তাদের পদ্ধতির অনুরুপ তা ছাটাই করি নাহ। আমরা আমাদের মাথা রেজার দ্বারা ন্যাড়া করতে পারি। এই মাথা ন্যাড়া করতে সাহায্য করবে আমাদের সম্প্রদায়ভূক্ত কোন ব্যক্তি। তবে, মাথা ন্যাড়া করার সময় যে রেজার ব্যবহার করা হবে। তা শেখ আদির মাজারের পানি দিয়ে ধূয়ে নিতে হবে। যদি এই কাজ কেউ নাহ করে। তবে সেই ব্যক্তি কাফের হয়ে যাবে।
১২। কোন ইয়াজিদি মুসলমানদের গোসলখানায় ঢুকতে পারবে নাহ৷ এবং, সেখানে গোসল করতে পারবে নাহ। কেউ যদি মুসলমানদের পাত্র দ্বারা কিছু পান করে তবে সে কাফের।
১৩। খাবারের ব্যাপারে আমাদের সর্বচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। এটাই,হচ্ছে মূল পার্থক্য ইয়াজিদি থেকে অন্য সম্প্রদায়ের। আমরা মাছ খাই নাহ। লাউ জাতিয় সবজি, মটরশুটি, লেটুস পাতা খাওয়া আমাদের জন্য নিষিদ্ধ। এমনকি, লেটুস যেখানে জন্মেছে সেখানে বসতি স্থাপন করাও নিষিদ্ধ।
এই, বিধিনিষেধ তুলে ধরে তারা আর্জি জানায় যে, "আমরা নির্ধারিত কর প্রদান করবো, কিন্তু সৈন্য হিসাবে কাজ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়"